জীবনসঙ্গী কার না দরকার। একটি ছেলের বয়সন্ধির সাথে সাথে তার একজন মেয়েসঙ্গীর খোঁজ শুরু হয়ে যায়। আর একটি মেয়ে ছোট থেকেই বড় হতে থাকে এই ভাবনা মাথায় নিয়ে যে তাকে তার পরিবার একদিন কারো না কারোর সাথে বিবাহ দেবে। সেই ছেলেকেই জীবনসাথী মেনে আজীবন চালিয়ে যেতে হবে।
তবে আজকাল অবশ্য মেয়েদেরও নিজে থেকে জীবনসাথী খোঁজার পালা শুরু হয়েছে। উভয়ই একে অপরকে খুঁজে পেলে প্রেমের সাগরে অবগাহন শুরু হয়ে যায়। প্রেম এগোনোর সাথে সাথে বাস্তবের মাটিতে এসে যখন তা আছাড় খেয়ে পড়ে, তখন সেই প্রেমও আবার কান্নায় পরিণত হতে দেখা যায় আকছার।
প্রেম ও আবেগ
আমরা অধিকাংশই যখন প্রেমে পড়ি তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আবেগে তাড়িত হয়েই। আগে পিছে সাতপাঁচ না ভেবেই প্রথমে প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে, পরে একটু একটু করে সাঁতার কাটতে শিখি।
আজ এই ডিজিটাল যুগে আমাদের কিন্তু পিছিয়ে থাকলে চলবে না। আমরা এখন কমবেশি সকলেই আগের চেয়ে সকল বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন। তাই বলে প্রেমে পড়া বারণ বলছি না। তবে প্রেমে পড়ায় আগে সকলেরই এই বিষয় নিয়ে হোমওয়ার্ক করে নেয়া উচিত, তা সে ছেলে মেয়ে উভয় ক্ষেত্রেই।
প্রেমে আস্থা ও সংযম
একটি ছেলে কোন মেয়েকে প্রথম দেখার পরই যদি প্রেমে পড়ে যায়, তখন নিজের প্রতি আস্থা ও সংযমের পথ নিতে হবে। চটজলদি প্রেম নিবেদন করলে প্রত্যাখ্যাত হতে পারেন। তাই কিছু বিষয়ের প্রতি সজাগ থাকা খুব জরুরী। সেগুলি কি?
- প্রথম দেখায় যাকে আপনার মনে ধরেছে তাকে আপনি কি প্রকৃত বন্ধু ভাবতে পারছেন? সেটা লক্ষ্য করে এগিয়ে চলুন। আপনার ভালো লাগা বিষয়গুলি থেকে কি সেগুলোর কোথাও কোনও মিল কি পাচ্ছেন ওর ভালো লাগায়? তাহলে বুঝবেন এক ধাপ এগোলেন ।
- আপনার নিজস্ব ব্যক্তিত্বের সাথে সেই মেয়েটির ব্যক্তিত্ব কি খাপ খায়? ধরুন আপনি কম কথা বলেন, অবজারভ করেন বেশী, তেমনি মেয়েটিও সেরকমই, কম কথা বলছে, ধীর স্থির। অর্থাৎ আপনার সাথে মিলছে। আপনি দ্বিতীয় ধাপ এগোলেন।
- এবার আপনার পছন্দ আর অপছন্দের সাথে মিল খোঁজার পালা। আপনি কুকুর বা পোষ্য ভালোবাসেন, আপনি দেখলেন পোষ্যকে সে কোনওভাবেই পছন্দ করে না। আপনি আর এগোবেন না। কারণ মানুষ কি ভালোবাসবে আর কি ভালোবাসবে না সেটা নিতান্ত তার ব্যক্তিগত। কিন্তু যদি মেয়েটিকে দেখেন সে পরম স্নেহে একটি কুকুরছানাক আদর করছে। আপনি আরো একধাপ এগোলেন।
- যাকে নির্বাচন করতে চাইছেন তার সম্পর্কে তারই পরিবেশে খোঁজ করুন। প্রতিবেশীরা তার সম্পর্কে কি মত পোষণ করেন। হতেপারে এমন কোনও তথ্য যা আপনার স্বভাবের বিপরীতমুখী। আর যদি দেখেন তেমন কোন সমস্যা নেই, তাহলে এগোন।
- যাকে জীবনসাথে হিসেবে পেতে চাইছেন, তার সাথে সময় কাটানোর পরিকল্পনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে এই ধাপেই আপনি তাকে অনেক বেশী পরে পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাবেন। এরেঞ্জ হোক বা প্রেম সব ক্ষেত্রেই এই ফিজিক্যাল সাক্ষাতের একটা গুরুত্ব রয়েছে।
- এবার দেখবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত সাথী কি সহানুভূতিশীল? যদি তাই হয়ে সেক্ষেত্রে সেই স্বভাব আপনার পক্ষে মঙ্গলেরই সূচক হবে।
- এবার এলো পারস্পরিক বোঝাপড়া। সেটা কি? সবকিছুই আপনার সাথে মেলার পরও যে আপনার আর তার মধ্যে ভবিষ্যতে বনিবনা বজায় থাকবে সেটা কিন্তু নাও হতে পারে। আর সেখানেই পারস্পরিক বোঝাপড়াটা যদি ঠিক থাকে তাহলে একে অপরকে মানিয়ে নিতে কোনও অসুবিধা হবে না। হতেপারে এক্ষেত্রে দুজনকে কিছু না কিছু স্যাক্রিফাইস করলেও করতে হতে পারে। আর এই বোঝাপড়া যদি আপনাদের মধ্যে আছে সেটা অনুভব করতে পারেন তাহলে আপনার পথ অনেকটাই নিকটে ।
- প্রেম বা ভালোবাস মস্তিষ্ক নিয়ে আসে না, আসে মন থেকে। অর্থাৎ একে অপরের মনকে কতটা বুঝতে পারছেন এটা অবশ্যই যাচাই করে নেয়ার দরকার আছে। ধরা যাক আপনি খেলাধুলা ভালবাসেন, এমন নয় তাকেও খেলহাধুলা ভালোবাসতে হবে, হতেপারে উনি ভালোবাসেন গান গাইতে বা কবিতা লিখতে। আপনাকে তার ভালো লাগা বা প্যাশনকে গুরুত্ব দিতে হবে। ঠিক একইভাবে সেই মেয়েটিকেও আপনার খেলাকে নিয়ে কোনো কটাক্ষ করা উচিত হবে না। অর্থাৎ একে অপরের পেশা বা নেশাকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করে নেয়া।
- আমরা অনেকেই আজকাল একাকীত্বে ভুগি। এর অন্যতম কারণ আমাদের যৌথ পরিবারের কনসেপ্ট ভেঙ্গে গেছে। আর সম্পর্ক নির্মানের আগে এই একাকীত্ব দূর করতে একে অপরকে সহায়ক হতে হবে। পরস্পর পরস্পরকে মন দিয়ে শুনতে হবে, একে অপরকে সময় দিতে হবে।
- এবার পৌঁছে গেলেন অন্তিম পর্বে। যাকে নির্বাচন করবেন, সেই সাথীকে আপানার পরিবার কি মেনে নিতে পারছেন? কারো যে আবা মা আপনাকে জন্ম দিয়েছে তাদেতর সাথে এডজাস্ট করে চলাটা আসলে সম্পর্ককে সম্মান জানানো।
এই বিষয়গুলি ধরে এগোনোর পরও কি ব্রেক আপ হবে না? হতে পারে, তবে সেটা সিচুয়েসন ফেস ধরে চলতে হবে। সমস্যা দেখা যাবে । আসল কথা জীবনসাথী যদি সঠিক হয় তাহলে আগামীদিনে নিজদের চলার পথও সুন্দর আর সাবলীল হবে।