শচীন কত্তার সেই গান- ‘বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে হৃদয়ে দিয়েছো দোলা’ – গানটি থেকে বুঝতেই পারছেন হৃদয়কে নাড়া দিতে গন্ধের ভূমিকা অতি বাস্তব। প্রেমাতুর কপোত কপোতির কাছে ফুলে গন্ধ তাদের শরীরি কামনাকে ত্বরান্বিত করে। বিবাহের প্রথম শয্যায় ফুলের ভূমিকা আমাদের সমাজে প্রচলিত।
ভালোবাসার মানুষটিকে গোলাপ দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবার রীতি এসবই এই গন্ধেরই অবদান। যে কোন ফুলের গন্ধ পুরুষ ও নারীর যৌন চাহিদা বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হয়। পৃথিবীর গবেষকরা প্রমাণ পেয়েছেন ‘হেডিওন’ যার কেমিক্যাল নাম ‘মিথাইল ডিহাইড্রোজ্যাসমোনেট’ এছাড়া জুঁই ফুলের গাঢ় সুগন্ধী ল্যাবরেটরিতে তৈরী করতে গিয়ে এক কেমিস্ট যার সিন্থেটিক ফর্মুলা তৈরী করেন, যাকে নাকের একটি বিশেষ ফেরোমেন রিসেপটরকে উজ্জীবিত করে তোলে, যার ফলস্বরূপ দেখতে পাই উদ্দাম যৌনতা।
অর্থাৎ বিশেষ সুগন্ধ পুরুষ ও মেয়েদের যৌন চাহিদা বাড়িয়ে তুলতে পারে জুঁই। ‘হেডেন’ একটি গ্রীক শব্দ যার অর্থ মজা, আনন্দ ও যৌন আকাংখা। জুঁই ফুলের গন্ধে রয়েছে ‘হেডিওন’ নামক একটি কম্পোনেন্ট যা মানব দেহের যৌন চেতনাকে উদ্দীপ্ত করে। এই জুঁই আর ম্যাগনোলিয়ার মিশ্রণে তরতাজা সুগন্ধ যা নেশা ধরিয়ে দিতে পারে এবং বহুদিন ধরে পারফিউম তৈরী করতে ব্যবহার করা হয়েছে। রাতে শোবার আগে জুঁই পারফিউম গায়ে মেখে নিলে রাত সঙ্গিনী সাথে আনন্দের সাথে কাটাতে পারবেন।
তবে কি শুধুই জুঁই? কামনা বাড়িয়ে তোলার কাজে অন্যন্যা সুগন্ধীর ভূমিকা কি? আসুন জেনে নেওয়া যাক, কোন গন্ধ কতটা যৌনতাকে পরিচালনা করতে সক্ষম! এদের গুণইবা কতখানি!
ভ্যানিলা-
আমেরিকার দুই লেখক হার্ভে উইক্স ফেল্টার এবং জন উরি লয়েড মেনে নিয়েছেন ভ্যানিলার নির্যাস যৌন আকর্ষণ বাড়ানোর কাজে ব্যাবহার করা সম্ভব। প্রাচীন চীনেও এই সুগন্ধীর সাথে যউন আকর্ষণের গভীর যোগাযোগ আছে। ভ্যানিলার মিষ্টি গন্ধ আমাদের যৌন চেতনাকে বাড়াতে সক্ষম।
ল্যাভেন্ডার-
শিকাগোর ‘Smell and Test Treatment Research Foundation’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও নিউরোলজিক্যাল ডিরেক্টর ডাঃ অ্যালান আর হির্শ-এর সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে কুমড়োর পাই আর ল্যাভেন্ডারের মিশ্রিত দ্রবণের সুগন্ধে পুরুষের শিশ্নে রক্ত সংবহনের হার অন্ততপক্ষে চল্লিশ শতাংশ বেড়ে যায়। পৃথিবীর অন্য কোনও সুগন্ধ এর চেয়ে বেশি কার্যকর হয় না।
লবঙ্গ-
এক কাপ কফিতে অল্প করে লবঙ্গের গুঁড়ো মিশিয়ে বয়ফ্রেন্ডকে দিয়ে দেখুন পরিবর্তন কিছু পান কি না। বৈজ্ঞানিকদের গবেষণায় পাওয়া গেছে লবঙ্গ নারী ও পুরুষের টেস্টোটেরন নিঃসরণে আলোড়ন সৃষ্টি করে। লবঙ্গের মতো বেশ কিছু মশলায় ‘ইউটেরাইন ভ্যালু’ আছে যার ফলস্বরূপ জননাঙ্গে যৌনতার বাসনা তৈরী হয়। আমাদের সংস্কৃতিতে লবঙ্গের ব্যবহার অপরিসীম। তাই লবঙ্গ যুগলের যৌনমুহুর্তে ঝড় তোলে।
দারুচিনি-
কথিত আছে রানী ক্লিওপেট্রা দারুচিনির সুগন্ধী মেখে মার্ক অ্যান্টনির হৃদয় চুরি করেছিলেন। গ্রেট ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের Social Issues Research Centre – থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে দাবী করা হয়েছে পুরুষের ইরেকশনে দারুচিনির গন্ধ নাকি দারুণ কাজ করে। ’52 Sex week of amazing sex’ বইয়ের লেখক ইয়ান কারনার লিখেছেন, ‘বেশ কিছু গন্ধের প্রভাবে মস্তিষ্কে বারতি রক্ত সঞ্চালিত হয় যার প্রভাবে মানুষের আবেগ, হাবভাব, এনার্জি, হরমোন ইত্যাদিতে প্রভাবিত হয়। তাই আজকাল কোলন, বডি স্প্রে ইত্যাদিতে দারুচিনির সুগন্ধীর বাজার রমরমা।
লেবুজাতীয় ফল বা সবজি-
ডাঃ হির্শ কয়েকজন পুরুষকে গোলাপি বাতাবিলেবুর গন্ধ মাখা কিছু মহিলার শরীরের সুগন্ধ থেকে তাদের বয়স আন্দাজ করতে বলেছিলেন। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে তারা মহিলাদের বয়স অন্তত ছয় বছর কম ভেবেছেন। শুধু তাই নয় গবেষণায় কুড়ি শতাংসের ওপর পুরুষই উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছেন কমলালেবুর সুগন্ধে। প্রকৃতপক্ষে অধিকাংশ পুরুষই লেবুজাতীয় গন্ধের ভক্ত। যার ফলে বাজারে আমরা পুরুষের প্রসাধনীতে সাইট্রাস ফ্লেবার ব্যবহার বেশি। এছাড়া লেবুর গন্ধ মনে আত্মবিশ্বাস এনে দেয়, নিজেকে তরতাজা রাখতে সাহায্য করে। শরীরে ভিটামিন সি এর প্রয়োজন সবসময়ই বেশি।
পেপারমিন্ট-
যৌন উদ্দীপক বা অ্যাফ্রোডিসিয়াক হিসেবে পেপারমিন্ট অত্যন্ত জনপ্রিয় সেই গ্রীক সভ্যতা থেকেই। পেপারমিন্ট হল জনপ্রিয়তা ও গুণের রহস্য। সাম্প্রতিক্তম গবেষণা তাই বলে। এর প্রধা্ন রাসায়নিক উপাদান হল এস্টার বা মিথাইল অ্যাসিটেট। এই যৌগ থেকে তৈরি হওয়া তীব্র গন্ধের সাথে আরো কিছু সুগন্ধী মিশ্রনে প্রাপ্ত দ্রবণ শারিরীক সঙ্গমের ইচ্ছা তীব্র করে আর মহিলাদের অর্গাজমে সাহায্য করে।
চন্দন-
এই সুগন্ধী কার না প্রিয়। শুদ্ধতা ও শান্ত বা স্তব্ধতার একমাত্র অবলম্বন। যদিও এর গন্ধটা অনেকটা বুনো। প্রিমিটিভ। চন্দন যৌন ইচ্ছাকে বাড়াতে সাহায্য করে। চন্দনের তেল পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে এবং পিটুইটারি গ্ল্যান্ডকে কর্মক্ষম রাখে, ফলে যৌন ইচ্ছা সংগঠিত হয়। যৌনতায় স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে আসে।
কোন সময় কি সুগন্ধী নিয়ে দিনযাপন করবেন এবং শরীর ও মন সতেজ রাখবেন। সেই বিষয়ে কিছু টিপস-
মহিলাদের জন্য কিছু সুগন্ধী-
অফিসে যখন যাবেন তখন জুঁই, গোলাপ, লিলি, পিয়োনি। যখন ক্যাজিয়াল থাকবেন তখন ভ্যানিলা, পিচ, আপেল। আর রাতে অবশ্যই সঙ্গে নিয়ে শুতে যাবেন কস্তুরি, চন্দন, পাচৌলি, অ্যাম্বার, অপূর্বচম্পক, ল্যাভেন্ডার।
পুরুষদের বিভিন্ন সময়ের সুগন্ধী-
অফিসে নিয়ে যাবেন লেবু, কমলালেবু, বারগামোট, গ্রিন টি, তামাক। ক্যাজুয়াল হিসেবে সাথে রাখুন আদা, দারুচিনি, গোলমরিচ ইত্যাদি সুগন্ধী। আর রাতে নিতে ভুলবেন না অ্যাম্বার, কস্তূরী, লেদার, তুলসী, জিন।
গন্ধের প্রভাব মনের মধ্যে এক পরিবর্তন আনে এটা স্বীকার না করে উপায় নেই। কোন সুগন্ধী কিভাবে আমাদের মস্তিস্কে কি প্রতিক্রিয়া এনে দেয় বা প্রভাব ফেলে তার একটি ছোট্ট তালিকা নিচে দেওয়া হল-
- গোলাপ আর পাচৌলি- হার্ট রেট বেড়ে গিয়ে থাকলে তা কমায়।
- ইউক্যালিপটাস- ব্যথার অনুভব কমায়।
- ল্যাভেন্ডার- মানসিক চাপ কমায় এবং আনন্দ ও উত্তেজনা সৃষ্টি করে, ব্যথা লাগা কমায়।
- অপূর্বচম্পক- স্মৃতিশক্তি কমায় (কোনও ট্রমা ঘটে থাকলে এটা খুব কার্যকর)।
- গোলাপ, ল্যাভেন্ডার ও জুঁই- মাংসপেশিকে রিল্যাক্স করে ব্লাডপ্রেশার কমায়।
- পিপারমেন্ট- শারীরিক যোগ ব্যায়ামের জন্য জোগান বাড়ায়, ফ্যাট কমায়, মুড ভাল করে, দিনের বেলা ঘুমানোর প্রবণতা কমায়, স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
- জুঁই এবং ল্যাভেন্ডার- ইতিবাচক চিন্তাভাবনা বাড়ায়।
- কমলালেবু- দুশ্চিন্তা কমায়, মন শান্ত করে