প্রেম মানব জীবনে পবিত্র এক অনুভূতি। বয়ঃসন্ধিকালের দ্বারে এসে যুবক যুবতীরা পরস্পর প্রেম বশে আবিষ্ট হয়। সেই হৃদয় তখন শুধুই একগামী হয়ে প্রেমসাগরে ভেসে যেতে প্রস্তুত থাকে। শরীরটাকে একটা পাল বিহীন নৌকা বানিয়ে পাড়ি জীবনের গভীর সমুদ্রে। সমুদ্রের স্রোত আর বাতাসের সাথে লড়াই করে সে এগিয়ে চলে সেই কাঙ্খিত মানুষটির দিকে।
এ যাবত যারা প্রেমে পড়েছেন তাদের অধিকাংশই আবেগের বশেই প্রেম সাগরে ঝাপ দিয়েছেন। প্রেমে পড়তে যে হিসেব কষে এগোতে হয় তার কথা কজনা মাথায় রাখে! যদি কেউ সেই প্রেমিক বা প্রেমিকাকে বুদ্ধি দেবার চেষ্টা করে তখন উপদেশদাতা তাদের কাছে মহা শত্রুতে পরিণত হয়। সময়ে সাথে সাথে শিল্পে সাহিত্যে প্রেন বাব বার নানাভাবে প্রতিভাত হয়েছে, এখানে পবিত্রতার ব্যাপারটাকে ভীষন গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। একজন প্রেমিক তাকে প্রেম নিবেদন করে প্রেমিকাকে। প্রেমিকা আবেদন পায়। প্রেমিকার মঞ্জুর করার দায় থাকে।
অর্থাৎ প্রেমিকার যদি পছন্দ না হয় সে প্রত্যাখান করতেও পারে। প্রত্যাখ্যাত হয়ে প্রেমিক বিগড়ে যেতে পারে। প্রেম নিয়ে এই মানসিক চাপান উতোর এটা আমাদের সমাজে এক ভয়ংকর পরিস্থিতি শুরু করতে পারে, করেও। সামাজিকভাবে যারা প্রম করে তাদেরকে সমাজ এখনও ভালোভাবে দেখে না। দেখলেও দুজন দুজনের সাথে মানিয়েছে কি না সেটার বিবেচনার ভার থাকে সমাজের ওপর।
এই সব কিছগু বিশ্লেষণ করে কিছু কথা বলাই যায়, কিছু সতর্কতার কথা। যা প্রতিটি প্রেমিক বা প্রেমিকাকে মেনে চলা উচিত। তা সে যত রূঢ় বাস্তবই হোক না কেন?
পছন্দের মানুষ
আপনি যাকে পছন্দ করেছেন তাকে কি সত্যিই আপনি পছন্দ করেন? নাকি বয়েসের সাথে বাবা বা মা যা বলেছেন, একজন লাইফ পার্টনার দরকার্ সেটা মেনেই চলেন? একা থাকা আপনার মধ্যে একঘেপনামো তৈরি করে। আর তখনই আপনি একজন জীবন সঙ্গীর খোঁজ করেন। যদিও সে প্রথমে জীবন সঙ্গী থাকে না, থাকে প্রেমিকা। আপনি কি চাইছেন সেটা ভাল করে বুঝে নিন। এবং তারপরেরি আপনি সম্পর্কের দিকে পা বাড়ান।
অপরদিককে চেনা বা জানা
যাকে ভালোবাসার জন্য আপনি প্রস্তুত তার সম্পর্কে অধিকাংশই না জেনে এগিয়ে যান, শুধুমাত্র ভালো লাগার ভিত্তিতে। প্রেম পাকলে পরবর্তীতে অনেক না জানা তথ্য যা আপনার পছন্দের বাইরে তা সয়ে যেতে হয়, এক কথায় হাত কামড়াতে হয়। তাই পরে যে হাত না কামড়াতে না হয় সেই কথা মাথায় রেখে যাচাই করে নিন, দরকারে তার সাথে বন্ধুর মতো করে মিশুন। প্রেমের কুড়ি এলেই সেই ফুল ফোটাবার জন্য তাড়াহুড়ো না করে সবুর করে যান। পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়ে পরবর্তী ধাপ এগোন।
আগামীতে জীবনসঙ্গী ভাবা
যাকে মনে ধরেছে তাকে কি আগামীতে জীবনসঙ্গী ভাবতে পারবেন? যদিও এই প্রেম বিষয়ে কথাগুলো একদ্মই খাটে না। হ্যা প্রায় সকলেই জীবন সঙ্গী মেনেই এগোন, কিন্তু কিছুদিন যাবার পর শুরু খোটাখুটি, ঝাগড়াঝাটি। তাই যাকে পছন্দ করছেন তার সাথে সারাটা জীবন কাটাতে পারবেন কি না সেই দিক ভেবে তবেই সিদ্ধান্ত নিন, নচেৎ পরে আঘাত পেয়ে মুষড়ে পড়বেন না যেন। সব সময় আগামীর কথা ভাবা উচিত। আবেগ আর বাস্তব এক নয়, ওই যে শুরুতে বললাম যে নৌকা নিয়ে জলবিহারে বেরোবেন সেই পথে কততা ঝঞ্ঝা সেটা আগে থেকে পরিমাপ করে পা বাড়ানো উচিত।
সম্পর্ক চলাকালীন ভুল দেখলে
সম্পর্ক চলাকালীন যদি আপনার মনে হয় আপনি ভুল করেছেন, এতো আপনার মনের মতো নন, আপনি অন্য কাউকে খুঁজছেন, সাথে সাথে সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসুন। কারণ এই ভুল বোঝা সম্পর্ক আরো এগোনোর পর আরোর সংকটে পড়বে। তাই পিছনে আসুন। হয়তো কষ্ট হবে, কিন্তু প্রে কষ্ট আরোও চতুর্গুন বৃদ্ধি পাবে। তাই ফিরে আসা বুদ্ধিমানের কাজ।
কতটা খুশী
প্রেমিক বা প্রেমিকা উভয় পক্ষ একে অপরের মেলামেশায় কতটা সুখ বা শান্তি পাচ্ছে, নাকি মেলামেসায় খালি একে অপরকে দোষারোপ করা, সন্দেহ করা এইসবই বেশি হয়, তাহলে বুঝবেন দুজনের ভাবনা, অভ্যাস বিপরীতমুখী। এই অবস্থায় নিজেকে প্রশ্ন করুন, নিজের কাছেই জানতে চান, আপনি কি সত্যিই একে ভালোবাসেন? যদি উত্তর ইতিবাচক হয় এগিয়ে। আবারও একটা কথা বলতে হয়ে আবেগে অন্ধ হবেন না।
পরিণতির নেগেটিভটা মেনে নেওয়া
প্রেম মানেই তা স্থায়ী সমাধান নয়, সব কিছু মেনে নেবার পরও তা পরিণতি নাও পেতে পারে। আর পরিণতি না পেলে নিজেকে শক্ত করে ধরে রাখার মতো মানসিকতা থাকতে হবে। সকলেরই কিছু ভালো দিক বা খারাপ দিক থাকে, আপনি নিজেও তার বাইরে নন। এখন আপনার কটা খারাপ দিক সে কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছেন, আপনি তার ক্লোন ভুল কতটা মেনে নেবার জায়গায় আছেন এইসব বিশ্লেষণ করতে করে সিদ্ধান্তে থাকুন, তাহলে আঘাত এলেও দেখবে তা সয়ে গেছেন। নয় তো এই ঝড় সুনামির চেয়েও মারাত্মক শক্তিশালী।
সম্পর্কে আনুগত্য
একে অপরের প্রতি কতটা অনুগত, এটা দেখা খুব জরুরী। ভালোবাসায় এই বোঝাপড়া না থাকলে ছন্দ পতন নিশ্চিত। আপনি যাকে মন দিয়ে ভালোবাসেন, যাকে জীবনের সবকিছু দিয়েছেন, সে আপনার প্রতি কতটা অনুগত সেটা মেপে নেয়া খুব দরকার। তার মানে নিজেকে বিকিয়ে দেয়া নয়। আনুগত্য মানে দাসত্ব নয়। এই ব্যালান্সের অভাব ঘটলেই এখানে দাসত্ব মনে হবে। একতরফা হয়ে যাওয়া, হিসেবে কম বেশী থাকতে পারে, তাই বলে তার ব্যবধান অনেক বর কিছু হবে না। তাই একে অপরের প্রতি লয়াল বা অনুগত থাকা প্রেমকে স্থায়ী করে। নচেৎ ব্রেক আপ নিশ্চিত।
সবশেষে বলি
প্রেম চিরন্তন এসব গল্প উপন্যাসে থাকে। তাই নিয়ে আবেগ থাকে, আবার সেই আবেগে ভেসে যাওয়া থাকে। প্রেমে সংস্কার মানে সামজিক সংস্কার একটা বড় দিক। যা এই ডিজিটাল যুগেও আমরা অতিক্রম করতে পারিনি। আমরা অভ্যাসে আধুনিকতার ভান করি, আদলে আমরা সেই তথাকথিত সমাজ ও সংস্কারের ভয়ে সব কিছু মানতে মানতে প্রেমকে মূল্য দিতে দিতে নিজেই শেষ হয়ে যাই। তাই প্রেম সাগরে ডুব দেবার আগে উপরের ভাবনাগুলো চর্যায় নিয়ে আসুন। নিজেকে বাঁচান।
হয়তো স্বার্থপরের মত শোনাচ্ছে কারণ এখানেই আমাদের সামাজিক সংস্কার বাধা হয়ে দাঁড়ায়, আমাদের এইসব ভুলে প্র্যাক্টিক্যাল হতে হবে, অনেক বেশি আধুনিক মনন নিয়ে বাঁচতে হবে। প্রেম এলে আসুক। আবার চলে গেলে যাক। কিন্তু তাই বলে জীবন থেকে প্রেম চলে যাবে না। এই যাওয়া আসার খেলাই জীবন। আমাকে বেঁচে থাকতে হবে। আমাকে এমন কিছু করে যেতে হবে যা আগামির জন্য দৃষ্টান্ত হয়। তাই ভাবিয়া করিও প্রেম, করিয়া ভাবিও না।