নিরিবিলিতে প্রেম করার জায়গা

একে শীতকাল, তার উপর সামনে বড়দিন। শহর জুড়ে শুধু উৎসব নয়, প্রেমেরও মরসুম। বড়দিনের প্রেম (Christmas Dating) বলেও তো একটা কথা আছে না কি! তবে কলকাতা শহরের ভিড় মানুষকে পাশাপাশি হাঁটতেও দেয় না। বিশেষ করে এই উৎসবের দিনগুলিতে তো শহরে পা ফেলাই দায় হয়।

আর এই সব রঙিন দিনে নিজের প্রিয়জনের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর ইচ্ছা জাগে। বড়দিনের (Christmas Dating) জন-জোয়ারে সেটি কী ভাবে সম্ভব ভাবছেন তো? রইল এমন কয়েকটি নিরিবিলি জায়গার খোঁজ।

১। চিড়িয়াখানা

পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের জন্য টিকিটের দাম ১০টাকা। পাঁচ বছরের বেশি বয়সিদের জন্য টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা। সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে চিড়িয়াখানা।

টিকিট পাওয়া যায় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪:৩০টে পর্যন্ত। সাধারণত বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার ছুটির দিন হলে খোলা থাকে চিড়িয়াখানা। বন্ধ থাকে তার পরের দিন।

২। ইকোপার্ক

আকাশবিস্তৃত সবুজ খোলা মাঠ, বাগান, মিষ্টি হাওয়া— কংক্রিটের শহর থেকে কিছুক্ষণের জন্যে বেরিয়ে প্রিয়জনের হাতে হাত রেখে হারিয়ে যেতে চাইলে যেতে পারেন ইকো পার্কে। অনেকটা জায়গা জু়ড়ে নানা রকম দ্রষ্টব্য রয়েছে এক প্রাচীরের মধ্যে।

বিস্তৃত লেক, বাগান, নিরিবিলি বসার জায়গা, ওয়াটার স্পোর্টস, সবুজের ছোঁয়া আর মিষ্টি হাওয়া প্রেমিক-প্রেমিকাদের আকর্ষণ করে। কংক্রিটের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে একটু নিরিবিলি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে চলে যাওয়া যায় রাজারহাট-নিউটাউনের বিস্তীর্ণ এলাকার এই বিনোদন পার্কে ।

৩। প্রিন্সেপ ঘাট

বাবুঘাট-আউট্রাম ঘাট পার করে চক্ররেলের রেল লাইনের পাশ দিয়ে পায়ে হেঁটে পৌঁছানো যায় প্রিন্সেপ ঘাটে। হুগলি নদীর তীরে অসাধারণ একটি জায়গা। গঙ্গা নদীর প্রাকৃতিক শোভা উপভোগের সাথে সাথেই নিজেদের মধ্যে সময় কাটানোর দারুণ জায়গা। 

কত হাজার হাজার প্রেমের সাক্ষী এই প্রিন্সেপ ঘাট। কুয়াশামাখা গঙ্গার তীরে বসে লিখতেই পারেন প্রেমের এক নতুন পদ্য। আর প্রিন্সেপঘাট গেলে অবশ্যই প্রেমিক অথবা প্রেমিকা সঙ্গে নিয়ে উঠে পড়তে পারেন নৌকায়। গঙ্গাবক্ষে নৌকাবিহারে আসতে পারেন বাবুঘাটে। সেখানে গঙ্গার একদম ধারেই পেয়ে যাবেন কাচের দেওয়াল ঘেরা আইস্ক্রিম পার্লার। গঙ্গা দেখতে দেখতে একান্তে সময় কাটানোর উপযুক্ত জায়গা হতে পারে।

৪। ভিক্টোরিয়ার মাঠ

মেট্রো রেলওয়ে ষ্টেশন ময়দান থেকে ট্যাক্সি বা বাসে পৌঁছে যাওয়া যায় এখানে। মার্বেলের তৈরী এই অসাধারণ স্থাপত্যটি যুগলদের পছন্দের কলকাতার প্রেমের জায়গাগুলোর অন্যতম। চারপাশে সুন্দর সাজানো বাগান, গাছপালা, ফোয়ারা ও ছোটদীঘি। মহারাণি ভিক্টোরিয়ার স্মৃতি সৌধ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল। 

সুন্দর সাজানো বাগান, ছোট-দিঘি, ফোয়ারা, কচি সবুজ গাছ আর ভিক্টোরিয়াকে সাক্ষী করে প্রেম করার মজাই আলাদা। প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে চলে যেতে পারেন বড়দিনের পিকনিকের জন্য।

বছরের ৩৬৫ দিনই সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভিক্টোরিয়ার উদ্যান খোলা থাকে। কিন্তু ভিতরের প্রদর্শনীশালা খোলে সকাল ১০ টায়। সোমবার ও যে কোনও জাতীয় ছুটির দিনে বন্ধ থাকে এই প্রদর্শনীশালা।

ভারতীয় নাগরিকদের জন্য প্রবেশমূল্য ৩০টাকা। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, মলদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের জন্য প্রবেশ মূল্য ১০০ ও অন্যান্য বৈদেশিক নাগরিকদের এই মূল্য ৫০০ টাকা। তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারে এখানে, শুধু স্কুলের পোশাক ও পরচয়পত্র থাকলেই হবে।

৫। মিলেনিয়াম পার্ক

বাবুঘাটের কাছেই গঙ্গা নদীর পূর্ব তীরে সাজানো উদ্যান। গঙ্গার তীরে বসে জলের খেলা দেখতে দেখতে, শীতল হাওয়ায় মাতোয়ারা হয়ে, প্রিয় মানুষটির হাতে হাত রেখে প্রেমালাপ, উভয়ের সান্নিধ্যে উষ্ণ আকর্ষণ – প্রেমিক-প্রেমিকাদের আকৃষ্ট করে মিলেনিয়াম পার্ক।

৬। নলবন পার্ক

গাছগাছালিতে ভরা সামনে বিশাল ঝিলের শোভা প্রেমাকর্ষনে লিপ্ত করে প্রেমিক-প্রেমিকাদের। ঝিলে নানা বিনোদনের ব্যবস্থা ও আছে। প্রেমিক-প্রেমিকাদের প্রেমালাপের অবাধ স্বাধীনতা ও রয়েছে নলবনে। নলবন পার্ক, নলবন বোটিং কমপ্লেক্স নামে পরিচিত। বিধাননগর বা উল্টোডাঙা থেকে ট্যাক্সি বা বাসে পৌঁছে যাওয়া যায় নলবন পার্কে।

৭। মানি স্কোয়ার রুফ টপ

বাইপাসের ধারে নেহাত এক শপিং মল নয়। মানি স্কোয়ার রুফ টপে, অতো উঁচু থেকে কলকাতা দর্শন এক অতি মনোরম পরিবেশ। মনের মানুষটির সাথে নিশ্চিন্তে নিরালায় দীর্ঘক্ষণ সময় কাটিয়ে নিতে পারেন। প্রেমালাপে ভরিয়ে তুলতে পারেন ভালবাসার মানুষটিকে।

৮। সেন্ট্রাল পার্ক

প্রেমিক-প্রেমিকাদের ঘনিষ্ঠ ভাবে সময় কাটানোর জন্য অবাধ লাইসেন্স আছে। এখানে নির্জনে, নিভৃতে প্রেমিক-প্রেমিকারা উভয়ের ‌ঘনিষ্ঠতায় শরীরের উষ্ণতার ছোঁয়া পেতে পারে কেউ বাঁধা দেবে না। সেন্ট্রাল পার্ক বা বনবিতান কলকাতার প্রেমের জায়গা গুলোর মধ্যে বিখ্যাত। সল্টলেক করুণাময়ীর কাছেই এই সেন্ট্রাল পার্ক।

৯। কফি হাউস

ইনফিউশনে ডোবেননি কখনও? চলকে ওঠা চায়ের কাপে চুমুক না দিলে কফি হাউসের আনন্দ পাবেন কী করে। ইনফিউশন, সাথে কবিরাজী। প্রেম জমে ক্ষীর হয়ে যাবে কলকাতার সিগনেচার কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসে। 

১০। নন্দন

প্রেম করবেন আর নন্দনে আসবেন না, এটা হতে পারে না। এমন হয়নি কখনও। মনের মানুষটির সাথে জমিয়ে প্রেম করতে, তার সাথে জমিয়ে আড্ডা দিতে নন্দনে একবার আসতেই হবে। এছাড়া, উচ্চমানের থিয়েটার সঙ্গে ঘেঁষা ঘেঁষা প্রেম ও গল্প-আড্ডা-গান-চায়ের ভাঁড়ে চুমুক – এমন প্রেমের বাতাবরণ নন্দনে টেনে নিয়ে আসে প্রেমিক-প্রেমিকাদের।

১১। ময়দান

গড়ের মাঠের হাওয়া না খেলে আর কী প্রেম করলেন। ময়দান কলকাতার একটি বৃহত্তম উদ্যান। প্রচুর গাছপালা ও সবুজ মাঠে সঙ্গীনির হাত ধরে ঘাসের উপর হাঁটা, মাঠে পাশাপাশি উভয়ের গা ঘেঁষে বসার মধ্যে উচ্ছ্বসিত প্রেম ভরিয়ে তোলে যুগলদের।

১২। জাদুঘর

সপ্তাহে মঙ্গলবার থেকে রবিবার খোলা থাকে কলকাতার জাতীয় জাদুঘর। খোলে সকাল ১০টায় ও বন্ধ হয় বিকেল ৫টায়। প্রজাতন্ত্র দিবস, স্বাধীনতা দিবস সহ বেশ কিছু জাতীয় ছুটির দিনে বন্ধ থাকে জাদুঘর। পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের জন্য প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা, বাকিদের জন্য ৫০টাকা মাথাপিছু। বিদেশী নাগরিকদের জন্য প্রবেশ মূল্য ৫০০ টাকা।

তবে ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশের ব্যাপারে প্রচণ্ড কড়াকড়ি রয়েছে এখানে। ক্যামেরাযুক্ত স্মার্টফোন সহ প্রবেশ করতে চাইলে খরচ পড়বে ৫০ টাকা, স্থির ক্যামেরায় ১০০ টাকা। ভিডিয়ো ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ করতে গেলে খরচ পড়বে ২০০০ টাকা।

১৩। পার্কষ্ট্রিট গোরস্থান

পার্কষ্ট্রিটের ২৫০ বছরের পুরনো এই কলকাতার চলমান ইতিহাস হতে পারে আপনার আদর্শ প্রেমের জায়গা। পার্কষ্ট্রিট গোরস্থানে অন্যান্য জায়গার তুলনায় ভিড় খানিক কমই থাকে। এখানে এলে মনও এক গভীর প্রশান্তিতে ভরে উঠবে।

১৪। হাওড়া ব্রিজ

হাওড়া ব্রিজ প্রেম করার উপযুক্ত জায়গা হতে পারে এটাই অনেকে বিশ্বাস করতে চায় না। প্রিয়জনকে পাশে নিয়ে আলোয় মোড়া গোটা শহরকে চেখে দেখার সুযোগ কিন্তু আপনাকে হাওড়া-ব্রিজই দিতে পারে।

Previous articleChristmas Day: ডিসেম্বরের বড়দিনে উষ্ণতা মাখুক দাম্পত্যে, ঝালিয়ে নিন পুরোনো প্রেম
Next articleবিবেক বিন্দ্রা বিয়ের এক দিন পরেই ‘বৌ পিটিয়েছেন’, অভিযোগ দায়ের থানায়